নবী-রাসূলের পরিচয়? তাঁদের কার্যাবলী কি ছিল?
নবী-রাসূলের পরিচয়? তাঁদের কার্যাবলী কি ছিল?
আল্লাহ তায়ালার এই দুনিয়ায় মানুষ যেন ভ্রষ্ট পথে না গিয়ে সিরাতুল মুস্তাকীমের পথচারী হয়, সেই জন্যে তিনি প্রত্যেক যুগেই সেই যুগের চাহিদা অনুসারে নবী-রাসূল পাঠাতেন। তাঁরা আল্লাহর নির্দেশিত পন্থায় মানুষকে আল্লাহর একত্ববাদের দিকে আহ্বান করতেন। আল্লাহ তায়ালা হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)কে পুরো দুনিয়াবাসীর জন্য পাঠিয়েছেন।
নবী-রাসূলের পরিচয়ঃ
নবী শব্দের অর্থ- বার্তাবাহক, সংবাদবাহক। শরহে আকাইদে নাসাফিয়া গ্রন্থকার বলেন- আল্লাহর পক্ষ হতে সত্যস্বপ্ন অথবা ইলহাম অথবা ফেরেশতা প্রেরণের মাধ্যমে যার প্রতি বিশেষ ধরনের ওহী নাযিল হয়েছে এরূপ মনোনীত মহামানবকে নবী বলা হয়।
মোট কথা, আল্লাহর পক্ষ থেকে যারা সকলের নিকট হেদায়েতের সাধারণ বার্তা পৌঁছে দেন, তাদের নবী বলা হয়।
রাসূল শব্দের অর্থ- বাণীবাহক, দূত, সংবাদবাহক, পত্রবাহক। ‘মুজামুল ওয়াসীত’ গ্রন্থে বলা হয়েছে, ‘রাসূল, যাকে আল্লাহ শরিয়ত দিয়ে তার উপর আমল ও প্রচার করার জন্য প্রেরণ করেছেন।’
মোট কথা,বার্তাবাহক হিসেবে বিধিবিধানসহ মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে মনোনীত ও প্রেরিত হয়, তাদেরকেই রাসূল বলা হয়।
নবী-রাসূলদের কার্যাবলীঃ
নবী-রাসূলদের কার্যাবলী সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে অনেক আয়াত রয়েছে। এই আয়াতগুলোর মাধ্যমে আমরা জানতে পারি তাঁদের কাজ সম্পর্কে।
তিনিই নিরক্ষরদের মধ্য থেকে একজন রাসূল প্রেরণ করেছেন, যিনি তাদের কাছে পাঠ করেন তাঁর আয়াতসমূহ, তাদেরকে পবিত্র করেন এবং শিক্ষা দেন কিতাব ও হিকমত। ইতঃপূর্বে তারা ছিল পথভ্রষ্টতায় লিপ্ত।(সূরা জুমুয়া:২)
এই আয়াতটিতে নবী-রাসূলগণের তিনটি মৌলিক কাজের কথা বলা হয়েছে।
এক: আয়াত পাঠ করে শোনানো।নবী-রাসূলগণের একটি মৌলিক কাজ হলো তিনি যে সম্প্রদায়ের প্রতি প্রেরিত হন; তাদেরকে আল্লাহ তায়ালার নাযিলকৃত বিধান বা আয়াত পাঠ করে শোনানো।
দুই: পবিত্র করা। মানুষের দৈহিক ও আত্মিক পবিত্রতা সাধনের মাধ্যমে তাদেরকে মহান আল্লাহর নৈকট্যলাভ। ইহকাল ও পরকালের সাফল্যের পথে চলার উপযুক্ত করে তোলা।
তিন: কিতাব ও হিকমতের শিক্ষা দেওয়া। কিতাব অর্থ- আল্লাহর কিতাব; আর হিকমত অর্থ- রাসূলের হাদীস। যে শিক্ষা মানবজাতিকে পরিপূর্ণ সাফল্য ও অব্যর্থ কল্যাণ দিতে পারে তা হলো আল্লাহর কিতাব ও নবীর জীবনভিত্তিক শিক্ষা। এতেই নিহিত রয়েছে মানবজাতির সমস্তকল্যাণ।
হে নবী! আমিই আপনাকে সাক্ষী, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি এবং আল্লাহর আদেশক্রমে তাঁর দিকে আহবানকারীরূপে এবং উজ্জ্বল প্রদীপস্বরূপ। (সূরা আহযাব: ৪৫-৪৬)
পৃথিবীতে মানুষদেরকে জান্নাতের সুসংবাদ ও জাহান্নামের ভয়ের মাধ্যমে আল্লাহর দেখানো পথে তাঁর দিকে আহবান করা নবী-রাসূলদের কাজ।
হে রাসূল! আপনার প্রভুর পথে আহ্বান করুন হিকমত ও সুভাষণের মাধ্যমে। (সূরা নাহল: ১২৫)
হে রাসূল! পৌঁছিয়ে দিন আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে। আর যদি আপনি এরূপ না করেছেন, তবে আপনি তাঁর পয়গাম কিছুই পৌঁছালেন না। আল্লাহ আপনাকে মানুষের কাছ থেকে রক্ষা করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ কাফেরদেরকে পথপ্রদর্শন করেন না। (সূরা মায়েদা: ৬৭)
এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালার বাণী প্রচার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এবং আপনার কাছে আমি জিকির অবতীর্ণ করেছি, যাতে আপনি লোকদের সামনে ঐসব বিষয় বিবৃত করেছেন, যেগুলো তাদের প্রতি নাজিল করা হয়েছে, যাতে তারা চিন্তাভাবনা করে। (সূরা নাহল: ৬৪)
আল্লাহ তায়ালার বাণীর ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়েছে।
তিনি (রাসূল) তাদেরকে নির্দেশ দেন সৎকাজের বারণ করেন অসৎকর্ম থেকে, তাদের জন্য যাবতীয় পবিত্র বস্তু হালাল ঘোষণা ও নিষিদ্ধ করেন হারাম বস্তুসমূহ। (সূরা আরাফ: ১৫৭)
(হে রাসূল!) আমি আপনার নিকট সত্য সহকারে কিতাব নাজিল করেছি, যেন আপনি মানুষের মাঝে বিচার করতে পারেন, যেভাবে আল্লাহ আপনাকে সত্যপথ দেখিয়েছেন সেই অনুসারে। আর আপনি বিশ্বাসঘাতকদের পক্ষে বিতর্ককারী হবেন না। (সূরা নিসা: ১০৫)
আল্লাহর নির্দেশিত পন্থায় বিচার করা।
তিনিই তাঁর রাসূলকে পথনির্দেশ ও সত্যধর্ম দিয়ে প্রেরণ করেছেন, যাতে একে সবধর্মের উপর বিজয়ী করে। (সূরা সফ: ৯)
ইসলামকে সকল ধর্মের উপর বিজয়ী করা।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর মাধ্যমে নবুওয়াতের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে নবী-রাসূলদের আল্লাহ তায়ালা যে কাজের নির্দেশনা দিয়েছেন সেগুলো কাজের দায়িত্ব উম্মতে মুহাম্মাদীর উপর এসে পড়েছে। আল্লাহ তায়ালার দেওয়া সেই দায়িত্ব যেন আমরা যথাযথভাবে পালন করতে পারি। আমিন
মাশা আল্লাহ
শুকরিয়া