ইফকের ঘটনা
ইফকের ঘটনা
৮ম হিজরির শাবান মাসে বনু মুস্তালিক যুদ্ধে যাওয়ার সময় রাসূল (সা.) হযরত আয়েশা (রা.)- কে সঙ্গে নিয়ে যান। তার নিয়ম ছিল তিনি প্রত্যেক সফরে একেক জন স্ত্রীকে লটারির মাধ্যমে বাছাই করে সঙ্গে নিতেন। এ সফরে হযরত আয়েশা (রা.) লটারির মাধ্যমে সফরসঙ্গিনী হিসেবে মনোনীত হন। যুদ্ধ শেষে ফিরে আসার সময় কাফেলা পথিমধ্যে যুদ্ধ বিরতি করে। বিরতির সময় আয়েশা (রা.) প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণ করতে গেলে হঠাৎ তার গলার হার পড়ে যায়। তা খুঁজতে খুঁজতে দেরি হয়ে গেল। হযরত আয়েশা (রা.)- কে রেখেই কাফেলা সামনে অগ্রসন হতে থাকে। আয়েশা (রা.)- কে রেখে যাওয়ার কারণ ছিল এই যে, উটের ওপর বসানো পর্দাঘেরা এক বিশেষ বাহনের নাম ছিল ‘হাওদা’। তিনি হাওদার ভেতরে অবস্থান করলে কয়েকজন মিলে হাওদাটি উটের উপর তুলে দিতেন। মূল ব্যাপার হলো হযরত আয়েশা (রা.) ওজনে এত হালকা ছিলেন যে, যারা হাওদাটি উটের ওপর তুলে দিলেন, তারা বুঝতেই পারেননি হযরত আয়েশা (রা.) ভেতরে ছিলেন না। ইতোমধ্যে তিনি হার খুঁজে পেয়ে ফিরে এসে দেখেন, কাফেলার সবাই তাঁকে রেখেই চলে গেছেন। উপায়ান্তর না পেয়ে জমিনে চাদর বিছিয়ে তিনি শুয়ে পড়লেন, আশায় থাকলেন এই ভেবে যে, কাফেলার লোকেরা তাকে না পেয়ে খুঁজতে আসলে পেয়ে যাবে।
যাত্রা বিরতিতে কাফেলার কোনো মালামাল রয়ে গেল কিনা তা কুড়িয়ে আনার দায়িত্ব ছিল প্রখ্যাত বদরী সাহাবি হযরত সফওয়ান ইবনে মুয়াত্তাল (রা.)- এর ওপর। তিনি এসে হযরত আয়েশা (রা.)- কে দেখেই চিনতে পেরে বলে উঠলেন, “ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।” উল্লেখ্য পর্দার বিধান ফরজ হওয়ার পূর্বে তিনি আয়েশা (রা.)- কে দেখেছিলেন, তাই দৃষ্টি পড়ার সাথে সাথেই আয়েশা (রা.)- কে চিনে ফেললেন। তিনি উট বসিয়ে দিয়ে একটি দূরে অবস্থান করে হযরত আয়েশা (রা.)- কে উটের ওপর উঠতে বললেন। হযরত আয়েশা (রা.) উটের ওপর অবস্থান করলে সফওয়ান (রা.) পায়ে হেঁটে লাগাম ধরে চললেন। ইতোমধ্যে মুনাফিক আবদুল্লাহ ইবনে উবাই ও তার অনুসারীরা প্রচার করতে লাগলো হযরত আয়েশা (রা.) তাঁর সতীত্ব রক্ষা করতে পারেননি। তাদের অপপ্রচারের ফাঁদে পড়ে কয়েকজন দুর্বল মুসলিমও অপপ্রচারে অংশগ্রহণ করে। তাদের মধ্যে রয়েছেন হাসসান বিন সাবিত, মিসতাহ বিন উসাসা, হামনা বিনতে জাহাশ। কোনরূপ তথ্য প্রমাণ ছাড়াই কেভল আন্দাজ ও অনুমানের ওপর ভিত্তি করে নবি পরিবারকে বিতর্কিত করার জন্য এ অপবাদ দেওয়া হয়। অপবাদের এ ঘটনাকেই ‘ইফকের ঘটনা’ বলা হয়। অবশেষে আল্লাহ তা’য়ালা দীর্ঘ এক মাস পর ‘সূরা নূর’ নাজিল করার মাধ্যমে হযরত আয়েশা (রা.)-র সতীত্বের ঘোষণা দেন। ফলে যারা সংশয়ের দোলাচলে দোল খাচ্ছিলেন তাদের সংশয়ের নিরসন হলো। সাথে সাথে মুনাফিকদের মুখোশ উন্মোচিত হয়ে পড়ল।
(বিস্তারিত জানতে দেখুন: তাফহীমুল কুরআন সূরা নূর: ঐতিহাসিক পটভূমি।
মাশা-আল্লাহ
শুকরিয়া
মাশাল্লাহ