রবের সন্তুষ্টি-হুমায়রা ফারজানা সাবিহা


রবের সন্তুষ্টি
হুমায়রা ফারজানা সাবিহা


শরতের এক বিকেলে গ্রামের সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে শহরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করছিলেন মুজাহিদ নামক এক আল্লাহভীরু। শহরে পৌঁছে গাড়ি থেকে নেমে তিনি দেখলেন এক অপরূপ দৃশ্য। দুঃখের কিছু নেই, বরং এক সৌন্দর্যমণ্ডিত মুহূর্ত। শহরের বুকে এমন রমণীর সংখ্যা নেই বললেই চলে, শহরে আছে তো শুধু পাশ্চাত্যের বেড়াজালে আবদ্ধ মডার্ন নারী। যারা নিজেদেরকে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে স্মার্ট হতে গিয়ে নিজেদের জাত-মর্যাদাকে বিসর্জন দিচ্ছে, সেই সাথে করছে ইসলামকে অপমান। মুজাহিদের সাথে দেখা হলো মিস মুসলিমা নামের একটি মেয়ের। দুজন একে অপরের দিকে তাকালেন এবং সাথে সাথেই নিজেদের সামলে নিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হলেন। মুজাহিদ রওনা হলেন তার খালার বাড়ির উদ্দেশ্যে, আর মিস মুসলিমা রওনা হলেন ফটোকপির দোকানের উদ্দেশ্যে। পথ চলতে চলতে মিস মুসলিমা ভাবতে লাগলেন ছেলেটির মাঝে অন্যরকম এক মাধুর্য আছে যা যৌন আবেদনহীন। মুজাহিদ ভাবতে লাগলেন শহরের বুকেও এমন রমণী থাকতে পারে যার বেশভূষা এত সাধারণ।

সেদিনের পর থেকে দু’জনের মাঝে চলতে থাকল এক উত্তাল ঝড়, যা কিনা শয়তানের পক্ষ থেকে এক কুমন্ত্রণা। হঠাৎ একদিন দু’জনের আবারও দেখা হলো। ছেলেটি তাকিয়ে আছে, ঠিক সেই মুহূর্তে মিস মুসলিমা তাকে ডাক দিলেন। এমন সময় মুজাহিদের অবস্থা হলো ভেজা বেড়ালের ন্যায়। দু’জন একটি কোচিং সেন্টারের সামনে দাঁড়ালেন। তাদের মাঝে কিছু কথা হলো, তবে পাঠকগণ, তারা দু’জন-দু’জনার প্রতি আকৃষ্ট হলেও তাদের আলাপচারিতার মাঝে কোনো প্রকার অশ্লীলতার শিকার হয়নি। তাদের আলাপ শেষ হলে বিদায় নেওয়ার মুহূর্তে তারা একে-অপরের ব্যক্তিগত নাম্বার নিয়ে নিলেন। এরপর থেকে শুরু হলো মুঠোফোনের মাধ্যমে আলাপচারিতা।

এক পর্যায়ে মিস মুসলিমা আবেগের ছায়াতলে ঢলে পড়লেন, তবে তা প্রকাশ করলেন না। কিন্তু মুজাহিদ ব্যাপারটা বুঝতে পেরে তাকে সূরা ওয়াকিয়ার কিছু আয়াত এবং সূরা তাওবার কিছু আয়াত স্মরণ করিয়ে দিলেন। মুজাহিদ সম্পর্কে কিছু জেনে নেওয়া যাক। মুজাহিদ ছিলেন অতীব আল্লাহভীরু, সাধারণ বেশভূষার এবং নম্র স্বভাবের অধিকারী। অন্যদিকে, মিস মুসলিমা ছিলেন আল্লাহভীরু, তবে শিশু সুলভ স্বভাবের কারণে মুজাহিদের প্রতি অল্প সময়ের মধ্যেই ভালোবাসার সৃষ্টি করেন।

মিস মুসলিমা মুজাহিদকে জানালেন, "আমি আপনার হারামকৃত বান্ধবী হতে চাই না, তবে হালাল স্ত্রী হতে চাই।" মুজাহিদ বললেন, "অবশ্যই আল্লাহ চাইলে সবই সম্ভব, কিন্তু তিনি না চাইলে কোনো দিনই তা সম্ভব হবে না, কেননা তিনিই জানেন তার বান্দার জন্য কোনটি উত্তম আর কোনটি অনুত্তম। তাই আমাদের উভয়কেই তার প্রতি নির্ভর করা উচিত।" প্রতিত্তুরে মিস মুসলিমা জানালেন, "আমরা আল্লাহর কাছে চাইলে তিনি আমাদের নিরাশ করবেন না।" মুজাহিদ বললেন, "অবশ্যই তা চাইতে পারি, তবে নির্দিষ্টভাবে কাউকে চাওয়ার নির্দেশ ইসলামে নেই।"

এমতাবস্থায় মিস মুসলিমা মানসিকভাবে অনেক আঘাতপ্রাপ্ত হন এবং তার শেষ একটি আবদার করেন, "এই পৃথিবীর ক্ষণস্থায়ী জীবনে না হলেও, মহান রবের সন্তুষ্টির মাধ্যমে যদি আমরা উভয়ে জান্নাতপ্রাপ্ত হই, তবে সেই সুমহান জান্নাতে আমি কি আপনার সঙ্গী হতে পারি?" মুজাহিদ তখন দ্বিধা-দ্বন্দ্বে আবদ্ধ হন, যদি তার প্রিয়তমা স্ত্রীও তার কাছে এই ওয়াদা চান, তবে তিনি তাকে কী উত্তর দেবেন। ব্যাপারটি মিস মুসলিমা বুঝতে পেরে নিজের কষ্টকে মাটি চাপা দিয়ে মিথ্যা একটি হাসি দিয়ে বললেন, "আরে পাগল, মজা করছিলাম এতক্ষণ! আমি কী স্বার্থপর নাকি যে আরেকজনের আমানতের খেয়ানত করবো? তবে শেষ একবার আমি আপনার সাথে দেখা করতে চাই।"

মুজাহিদ বললেন, "আমরা যদি আবারও শয়তানের খপ্পরে পরে যাই?" মিস মুসলিমা দীপ্ত কণ্ঠে জবাব দিলেন, "এমনটি হতে দিব না।" পরদিন তারা একটি জায়গায় দেখা করলেন, যেখানে কোনো খারাপ চেতনা তাদের গ্রাস করতে পারবে না। মিস মুসলিমা তার শেষ কিছু কথা বললেন, "আজ আমাদের শেষ দেখা। আমার কিছু কথা আপনাকে জানাতে চাই। আমার পছন্দের সূরা ছিল মূলক, আজ থেকে সূরা ওয়াকিয়া এবং মূলক আমার অতি পছন্দের সূরা। আপনাকে অনেক জাযাকাল্লাহ, অল্প সময়ে এসে আমাকে কিছু সুন্দর মুহূর্ত এবং হেদায়েতের বাণী উপহার দেওয়ার জন্য। আমি চাই আল্লাহ আপনাকে আপনার মতো একজন আল্লাহভীরু স্ত্রী উপহার দিন। আজ আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে আপনাকে চিরতরে বিদায় জানালাম। আল্লাহ আপনাকে উত্তম জাযা এবং হেফাজতের চাদরে আবৃত রাখুন (আমীন)।"

মুজাহিদও তার শেষ কিছু নসীহা জানালেন, "আল্লাহ আপনাকে আরও সম্মান দান করুন এবং ব্যক্তিগত আমল-আখলাক মজবুত করার তাওফিক দান করুন। আপনি আজীবন আমার কাছে সম্মানের একজন।" বিদায়ের সময় মুজাহিদ মিস মুসলিমাকে একটি বই উপহার দিলেন। বইটির নাম ছিল "পরকালের চিন্তা"।

পরিশেষে, তারা উভয়ে নিজেদের চাহিদাকে উপেক্ষা করে মহান রবের একত্ববাদের ঘোষণা দিয়ে তাওহিদের পথে যাত্রা শুরু করলেন।

শেষ বার্তা: (অবশ্যই আমারন নামাজ, আমার আনুষ্ঠানিক কাজকর্ম, আমার জীবন, আমার মৃত্যু সব কিছুই সৃষ্টিকুলের মালিক আল্লাহ তায়ালার জন্য।- সূরা আল আনয়াম: ১৬২)
Next Post Previous Post
2 Comments
  • Anonymous
    Anonymous September 28, 2024 at 6:56 PM

    মাশা আল্লাহ

  • Anonymous
    Anonymous September 29, 2024 at 8:19 PM

    মাশা আল্লাহ

Add Comment
comment url