ষাটগম্বুজ মসজিদ: বাংলাদেশের গৌরবময় স্থাপত্য নিদর্শন
ষাটগম্বুজ মসজিদ: বাংলাদেশের গৌরবময় স্থাপত্য নিদর্শন
বাংলাদেশের সমৃদ্ধ ইতিহাস ও স্থাপত্যশিল্পের অন্যতম অনন্য নিদর্শন হলো ষাটগম্বুজ মসজিদ। এটি শুধু বাগেরহাট জেলার নয়, বরং সমগ্র দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থাপনা। ইউনেস্কো স্বীকৃত এই বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান আমাদের অতীতের গৌরবময় কীর্তির এক জীবন্ত সাক্ষ্য বহন করে। মসজিদটির স্থাপত্যশৈলী, নির্মাণকালীন প্রেক্ষাপট ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব এক অনন্য সৌন্দর্য বহন করে, যা সময়ের পরিক্রমায় আজও বিস্ময় জাগায়।
মসজিদের ইতিহাস
ষাট গম্বুজ মসজিদ বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত একটি প্রাচীন মসজিদ। ষাটগম্বুজ মসজিদ নির্মিত হয় ১৫শ শতকে, বাংলার খ্যাতিমান শাসক ও ইসলাম প্রচারক খান জাহান আলী (রহ.) এর হাত ধরে। তুর্কি বংশোদ্ভূত এই মহান ব্যক্তি শুধু দক্ষ শাসকই ছিলেন না, তিনি ছিলেন এক জনদরদি ও দূরদর্শী নীতিনির্ধারক। তার শাসনামলে বাগেরহাট অঞ্চল ইসলামী সংস্কৃতি ও সভ্যতার অন্যতম কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়। ইসলামী স্থাপত্যকলার অপূর্ব নিদর্শন হিসেবে ষাটগম্বুজ মসজিদ আজও উজ্জ্বল।
স্থাপত্য ও নির্মাণশৈলী
ষাটগম্বুজ মসজিদ তার ব্যতিক্রমী নকশা ও সুদৃঢ় নির্মাণশৈলীর জন্য বিশেষভাবে পরিচিত।
* মসজিদটির ছাদে ৭৭টি গম্বুজ রয়েছে, যদিও প্রচলিত নাম ‘ষাটগম্বুজ মসজিদ’। এর মধ্যে ৭০টি ছোট গম্বুজ ও ৭টি অপেক্ষাকৃত বড় গম্বুজ রয়েছে, যা একে অনন্য বৈশিষ্ট্য প্রদান করেছে।
* মসজিদের অভ্যন্তরে ১১টি প্রবেশদ্বার ও ৭টি সারিবদ্ধ মেহরাব রয়েছে, যা ইবাদতের পরিবেশকে আরও সুশৃঙ্খল ও প্রশান্তিময় করেছে।
* মসজিদটি মূলত লাল ইটের তৈরি, যা মোগল ও তুর্কি স্থাপত্যের সমন্বয়ে এক অপূর্ব নির্মাণশৈলী গড়ে তুলেছে।
* ভেতরের স্থাপত্য এমনভাবে গঠিত হয়েছে, যাতে স্বাভাবিক বাতাস চলাচলের মাধ্যমে ভেতরটি শীতল ও আরামদায়ক থাকে।
ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব
ষাটগম্বুজ মসজিদ শুধু একটি ধর্মীয় উপাসনালয় নয়, এটি বাংলাদেশের ইসলামী স্থাপত্য ও সংস্কৃতির গর্বের প্রতীক।
* ১৯৮৫ সালে ইউনেস্কো একে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
* এটি দেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র, যেখানে প্রতিদিন দেশি-বিদেশি অসংখ্য দর্শনার্থী ভিড় করেন।
* মসজিদটি ইসলামী ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও গবেষণার জন্যও বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ষাটগম্বুজ মসজিদ বাংলাদেশের অতীত ঐতিহ্যের এক উজ্জ্বল প্রতীক। এটি শুধু স্থাপত্যগত বিশ্লেষণের জন্য নয়, বরং ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্বের দিক থেকেও অত্যন্ত মূল্যবান। এই মহান স্থাপনাটি আমাদের ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ, যা ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ করা একান্ত প্রয়োজন।